সেই পোস্টার এখন খুলে ফেলেছেন হবিগঞ্জের ভুয়া ডেন্টিস্ট শফিকুর

সেই পোস্টার এখন খুলে ফেলেছেন হবিগঞ্জের ভুয়া ডেন্টিস্ট শফিকুর

হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ‘হবিগঞ্জের বাহুবলে ভুয়া ডেন্টিস্ট শফিকুরের প্রতারণায় সর্বস্বান্ত হচ্ছেন রোগীরা’ এ শিরোনামে সম্প্রতি স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় তথ্য বহুল সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদ প্রকাশের পর বরকে যান ভুয়া ডেন্টিস্ট শফিকুর রহমান। নিজের অপকর্ম ও প্রতারণার প্রতিচ্ছবি ‘ডেন্টিস্ট, মুখ ও দন্ত রোগ চিকিৎসক’ পরিচয় সাইনবোর্ড থেকে মুছে ফেলেন মিরপুর চন্ডছড়ি রোডে বাদশা ফার্মেসীর মালিক শফিকুর রহমান ।

সরেজমিনে দেখা যায়, পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের আগে বাদশা ফার্মেসীর সামনে বড় সাইনবোর্ডে বড় করে ডেন্টিস্ট ,মুখ ও দন্ত রোগ চিকিৎসক’ পরিচয় লেখা শব্দগুলো ছিল। ১৮ ডিসেম্বর সংবাদ প্রকাশের পর সেই ডেন্টিস্ট, মুখ ও দন্ত রোগ চিকিৎসক’ পদবি মুছে ফেলেছেন ভুয়া ডেন্টিস্ট শফিকুর রহমান।

উল্লেখিত সংবাদটি ছিল এই, বাহুবল উপজেলার মিরপুর বাজারের ধুলিয়াখাল রোডে বেসিক ব্যাংকের পাশে বাদশা ফার্মেসীর মালিক শফিকুর রহমানের স্বীকৃত কোন প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী না থাকলেও বনে গেছেন মস্ত বড় ডেন্টিস্ট। বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের সনদও নেই শফিকুর রহমানের। তবু তিনি নামের আগে বড় বড় ডিগ্রী ব্যবহার করে রাতারাতি বনে গেছেন দন্ত রোগ বিশেষজ্ঞ। নিজের নামের সাথে ‘ মুখ ও দন্ত রোগ চিকিৎসক’ পরিচয় ব্যবহার করে নোংরা ঘিঞ্জি পরিবেশে চেম্বার খুলে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে নামধারী কথিত ডেন্টাল চিকিৎসক শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে । গ্রামের অসচেতন ও অসহায় মানুষকে দন্ত চিকিৎসা দিয়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এছাড়াও নারী সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে এই ডেন্টিস্টের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে মিরপুর বাজারের ধুলিয়াখাল রোডে যেতেই চোখে পড়ে বাদশা ফার্মেসী। সেখানে গেলেই দেখা যায় নানা বয়সী রোগীর ভিড়। এসব রোগীদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক লোকই বেশি চোখে পড়ে। রোগীদের ভিড় ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলেই তার রুম থেকে আওয়াজ আসে ‘পরে আসেন, ডাক্তার সাহেব রোগী দেখছেন’। কিছুক্ষণ পরে ভিতরে ঢুকতেই দেখা যায় তিনি রোগীকে নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়াও শফিকুর রহমানের নিজ গ্রাম বিহারিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে নতুন বাড়ি স্থাপন করে সেখানে বাড়ির গেটের সামনে বড় করে নেইম – প্লেটে ডাক্তার বাড়ি লেখা রয়েছে। কিন্তু তার বাড়িতে নেই কোন প্রকার ডাক্তার। আবার ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস পাস না করেও তার বাড়ির গেইটে নাম ডাক্তার পদবি ব্যবহার করে যাচ্ছেন মাত্র এসএসসি পাস এই ভুয়া ডাক্তার।

শফিকুর রহমানের সাথে কথা বলে জানা যায়, কারিগরি বোর্ডের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা করে ১৫ বছর ধরে এই চিকিৎসা দিয়ে আসছেন তিনি। ডিপ্লোমা করে মুখ ও দন্ত চিকিৎসা দেওয়া ও নামের আগে ডেন্টিস্ট পদবী ব্যবহারের বিষয়ে প্রশ্ন করলে নিয়ম মেনেই দন্ত টিকৎসা দিচ্ছেন বলে দাবি তার। তবে বিএমডিসি’র (বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল) সনদ নেই বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ এর ২৯ (১) ধারা অনুযায়ী নিবন্ধনকৃত কোন মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এমন কোন নাম, পদবী, বিবরণ বা প্রতীক এমনভাবে ব্যবহার বা প্রকাশ করিবেন না যাহার ফলে তাহার কোন অতিরিক্ত পেশাগত যোগ্যতা আছে মর্মে কেহ মনে করিতে পারে, যদি না উহা কোন স্বীকৃত মেডিকেল চিকিৎসা-শিক্ষা যোগ্যতা বা স্বীকৃত ডেন্টাল চিকিৎসা-শিক্ষা যোগ্যতা হইয়া থাকে। ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রী প্রাপ্তগণ ব্যতিত অন্য কেহ তাহাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করিতে পারিবেনা। আইনের ২২ (১) ধারা অনুযায়ী নিবন্ধন ব্যতীত কোন মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এলোপ্যাথি চিকিৎসা করিতে, অথবা নিজেকে মেডিকেল চিকিৎসক বা, ক্ষেত্রমত, ডেন্টাল চিকিৎসক বলিয়া পরিচয় প্রদান করিতে পারিবেন না।

ভুক্তভোগীরা জানান, ওই ভুয়া চিকিৎসক তার নিজের ঔষধের দোকান বাদশা ফার্মেসীতে বসে। দাঁতের মাড়ির মতো স্পর্শকাতর অঙ্গের চিকিৎসা দেন ওই চিকিৎসক । কোন প্রকার প্রেসক্রিপশন না দিয়েই দেন এন্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ। আর এসব ওষুধও বিক্রি হয় ওই ফার্মেসীতে। আবার কোনো রোগীর দাঁতের ভয়ানক রোগ এমন ভয় দেখিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য মোটা অংকের টাকা নিয়ে যান।
তার অপচিকিৎসার ব্যাপারে স্থানীয়রা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। বিগত সরকারের আমলে তার দোকানের গ্লাসে পলাতক এমপি আবু জাহিরের এক নিকটাত্মীয়ের পোস্টার টানিয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগের লোক পরিচয় দিয়ে নিরাপদে রেখেছিলেন। তবে সেই পোস্টার এখন খুলে ফেলেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *