ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে চাকরির প্রলোভন দিয়ে একাধিক তরুণীদের হাত থেকে নাহিদা ঝুমুর আজাদ নামে এক নারীর বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে চাকরির প্রলোভন দিয়ে একাধিক তরুণীদের হাত থেকে নাহিদা ঝুমুর আজাদ নামে এক নারীর বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ।

হবিগঞ্জে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে চাকরির প্রলোভন দিয়ে একাধিক তরুণীদের হাত থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেনকক্সবাজারের এক রহস্যময়ী নারী।
রহস্যময়ী ওই নারী নিজে নাম একেক জায়গায় একক রকম প্রকাশ করেছেন। কোথাও নাহিদা ঝুমুর আজাদ, আবার সাদিয়া আফরিন সারিন নামে নামেও পরিচিত। আবার মোবাইল ফোনের ট্রু কলারে তার নাম আসে সানজিদা আক্তার।
রহস্যময়ী ওই নারীর অভিনব প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে হবিগঞ্জের অসংখ্য তরুণী এখন চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন।
ডিজিটাল প্লাটফর্মে চাকরি দিয়ে নিয়মিত বেতন-ভাতা দেয়াসহ আরও বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। তার মূল টার্গেট ছিল হবিগঞ্জের নারী উদ্যোক্তারা। সে ফেইসবুক গ্রুপ খুলে উদ্যোক্তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। তাদেরকে বলে ডিজিটাল প্লাটফর্মে তার সাথে কাজ করলে নিয়মিত প্রতিমাসে বেতন ও ভাতা প্রদান করবে। তবে শর্তসাপেক্ষ মতে এখানে চাকরি করতে হলে সবাইকে দিতে হবে আড়াই হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফ্রি । আবার কোন নারীদের বলেছেন সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে স্থায়ী চাকরি ব্যবস্থা করে দিবেন। এই মিথ্যে প্রলোভনে পড়ে একাধিক নারী দিয়েছেন ৩, ৫ এমনকি ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। এরপর চাকরি দেওয়া তো দূরের কথা গত প্রায় ৩ মাস ধরে ওই নারীর দেখাই পাচ্ছেন না তারা।
এমন অভিনব প্রতারণার অভিযোগ উঠলেও তা মানতে নারাজ অভিযুক্ত নাহিদা ঝুমুর আজাদ ওই নারী। তার ভাষ্য তিনি তাদের উপকারের জন্য টাকা নিয়ে ছিলেন, কাজ হয়নি টাকা ফেরত দিয়ে দেবেন। প্রায় ৬ মাস ধরে তার অভিনব এ প্রতারণা চললেও এ বিষয়ে কোন তথ্য নেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। এ বিষয়ে রহস্যময়ী ওই নারীর সাথে গত ১০ এপ্রিল মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামে আছেন আগামী ১৬ই এপ্রিল হবিগঞ্জে এসে সবার টাকা পরিশোধ করে দিবেন। কিন্তু তার দেওয়া নির্ধারিত তারিখে তিনি হবিগঞ্জ আসেননি। পরবর্তীতে আবারও তার ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন ২৩ এপ্রিল হবিগঞ্জ আসবেন। ওই তারিখেও তিনি হবিগঞ্জ আসেননি এরপর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে। এদিকে তার কাছে প্রতারণা শিকার হবিগঞ্জের তরুণীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
তার প্রতারণার ফাঁদে পা দেয়া অন্তত প্রায় ১০-১২ জন ভূক্তভোগী  ও প্রায় অর্ধশতাধিক নারী উদ্যোক্তার সাথে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। তারা প্রত্যেকেই নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে খুলে বলেছেন তাদের সাথে ঘটে যাওয়া অভিনব প্রতারণার গল্প।  নাম না প্রকাশের শর্তে প্রতারণা শিকার একাধিক নারী জানান, বিষয়টি সাংবাদিকদের জানানোর কারণে বারবার ওই নারী তাদেরকে হুমকি দিচ্ছে। বলতেছে পুলিশ দিয়ে তাদেরকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাবে। ওই নারীর নাকি অনেক উপর লেভেলে হাত আছে।  এই পরিস্থিতিতে অনেক নারীই ভয় পেয়ে গেছেন, তারা বলছেন যা হওয়ার হয়েছে আমরা আর নতুন কোন ঝামেলায় জড়াতে চাই না।
জানা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ‘আমরাই নারী আমরাই উদ্যোক্তা’ নামে একটি ফেইসবুক গ্রুপ খুলেন সাদিয়া আফরিন সারিন। নারী উদ্যোক্তাদের বিজনেস প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দাড় করান এই গ্রুপকে। শুরুতে ভালোই চলছিলো গ্রুপের কার্যক্রম। হবিগঞ্জের নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে মিট আপসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম করেন। ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায় তাদের পাশে থাকতে গ্রহণ করা তার নানা উদ্যোগ। নারী উদ্যোক্তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠার পর সেই গ্রুপকে ব্যবহার করে ‘রেজিস্ট্রেশন ফি এবং জামানতের নামে নামে শুরু করেন চাঁদাবাজি। আড়াই হাজার টাকা দিলে গ্রুপে মডারেটরের চাকরি এবং গ্রুপ থেকে সেলারিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। লোভে পড়ে ১৮ জন নারী উদ্যোক্তা আড়াই হাজার টাকা করে ওই মহিলাকে দেন।  শুরুতে দুয়েক মাস বেশ কয়েকজনকে সেলারী দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর স্যালারি বন্ধ হয়ে যায়।
নাম না প্রকাশের শর্তে এক নারী জানান,  হোয়াটসঅ্যাপে সর্বশেষ তাদের সাথে গত ৩০ এপ্রিল কথা হয়েছে। ওইদিন তাদেরকে জানানো হয়েছিল সন্ধ্যায় প্রত্যেকের বিকাশে টাকা দেওয়া হবে।   কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও তাদেরকে আর টাকা দেওয়া হয়নি।
বিভিন্ন মিডিয়ার সূত্রে জানা যায়, ২০২১ইং সনে কক্সবাজার এনজিওতে চাকরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অসংখ্য তরুন তরুণীর থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে ওই নারী এবং তার স্বামী হবিগঞ্জ পালিয়ে আসে।
ওইখানে সে ও তার স্বামী নিজের মেইল থেকে ভুয়া নিয়োগ পত্র এবং কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম এবং আইডি ব্যবহার করে কাগজ পত্র সরবরাহ করে চাকরী দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেন ।
তিনি এবং তার স্বামী বলতেন তাদের সাথে ক্যাম্পের বিভিন্ন সিআইসি বা সচিবদের সাথে যোগাযোগ আছে। তারা চাইলে যে কাউকে চাকরী দিতে পারে। সে জন্য তাদের টাকা দিতে হবে। একজনকে তারা মেইল আইডিতে নিয়োগ পত্রও পাঠিয়েছে, সেখানে তার বেতন ধরা হয়েছে প্রতি মাসে ৭৫ হাজার টাকা। সেটা  বিশ্বাস করে তিনি ২ লাখ টাকা দেন।
এভাবেই একাধিক মানুষের সাথে প্রতারণা করে ওই এলাকা থেকে ৩০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় নারী ও তার স্বামী।
কক্সবাজার সদর থানার একটি মামলায় উল্লেখ করা হয় শহরের বার্মিজ স্কুলের সংযোগ সড়কের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ প্রকাশ পুইত্যার মেয়ে ঝুমিরা নাহিদা আজাদ,তার স্বামী মমতাজুল হকের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ এবং তৌহিদের পিতা মমতাজুল হককে প্রতারণার অভিযোগে আসামি করা হয়।
এ বিষয়ে সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওসি অজয় চন্দ্র দেব বলেন এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি পাইলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *