এমপিও নীতিমালায় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী শিক্ষকদের বেতন ও সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করতে এ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) জাবেদ আহমেদ।
জাবেদ আহমেদ বলেন, ‘এমপিও সংশোধনী সভায় নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ নিয়োগে যোগ্যতা এবং তাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উক্ত দু’টি পদে নিয়োগের স্থগিতাদেশ তুলে নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে আগামী সপ্তাহের বৈঠকে। আরও একটি বৈঠক করেই সব কিছু চূড়ান্ত করা হবে।’তিনি বলেন, ‘এমপিও নীতিমালা-২০১৮’-তে আগের বেতনস্কেলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা উল্লেখ করা হয়েছে। নীতিমালা জারির পর বেসরকরি শিক্ষকদের বার্ষিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, বৈশাখী ভাতা, কল্যাণ ও অবসর বোর্ড বাবদ ১০ শতাংশ চাঁদা নির্ধারণসহ নতুন বেশ কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। দ্রুত এসব বিষয়ে সংশোধন করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে তা কার্যকর করা হবে।’
জানা গেছে, নতুন এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে গত বছরের ১২ জুন ‘জনবল কাঠামো ও এমপিওভুক্তির নীতিমালা’ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নীতিমালার ভিত্তিতেই এখন থেকে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তবে, জারি করা এ নীতিমালা নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে মাধ্যমিক স্তরের সকল শিক্ষক সংগঠন। এ ছাড়া নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির দাবিতে গত কয়েক বছর লাগাতার অনশন-অবস্থান, ধর্মঘটকালে নতুন নীতিমালার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন।
তাদের দাবি স্বীকৃতি ও অনুমতিপ্রাপ্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার পরই ‘নতুন নীতিমালা’ কার্যকর করা হোক। শিক্ষক সংগঠনগুলো এ নীতিমালার বেশ কিছু ধারা-উপধারা নিয়ে আপত্তি ও সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন। নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের নেতারা বলছেন, যে নীতিমালা জারি করা হয়েছে তার নির্দেশনা ও তারই আলোকে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে গেলে ৫০০ স্কুল-কলেজও এমপিওভুক্ত হবে না।
‘নতুন নীতিমালা’-য় সবচেয়ে বেশি আপত্তি উঠেছে ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগের যোগ্যতা এবং গ্রেড নির্ধারণ নিয়ে। শিক্ষক নেতাদের মতে, এটিতে যে নির্দেশনা রয়েছে তাতে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হবে এবং শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের আগস্টেই বেসরকারি কলেজে ও ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগে স্থগিতাদেশ দিয়ে পরিপত্র জারি করে মন্ত্রণালয়।
গত ১২ জুন ‘জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮-তে বলা হয়েছে, নতুন নীতিমালার আলোকেই কাম্য যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করে নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। একসঙ্গে সকল প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির জন্য বিবেচনায় নেয়া হবে না। এগুলো পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্ত করা হবে। নীতিমালার নির্দেশনা বলা হয়েছে, বাজেটে ভারসাম্য রক্ষায় আগামী ৫ বছরে পর্যায়ক্রমেই এমপিওভুক্ত করা হবে।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস ছিল, বাজেটে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ নির্ধারিত না থাকলেও ‘থোক বরাদ্দ’ থেকে সর্বাধিক প্রতিষ্ঠান এমপিভুক্ত করা হবে। এ বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখেই নীতিমালাও শিথিল করা হতে পারে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির একজন সদস্য বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) জাগো নিউজকে জানান। তিনি বলেন, ‘সে আলোকেই নীতিমালায় সংশোধনী আনা হচ্ছে। এ কারণেই গতকালের বৈঠকে এসব নিয়েই দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আবারও এ কমিটি বৈঠক করবেন এবং সে বৈঠকেই চূড়ান্ত হবে সব। এরপরই তা অনুমোদনের জন্য সচিবের টেবিল হয়ে মন্ত্রী দফতরে যাবে। সেখানে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া গেলেই নীতিমালার সংশোধনীসহ পরিপত্র জারি হবে। তখন অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগের স্থগিতাদেশও তুলে নেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, সারা দেশে বর্তমানে সাড়ে সাত হাজার নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে ৫ হাজার ২৪২টি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাকে।